বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:বুধবার নবান্নে সর্বদল বৈঠক করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন, ৩১ জুলাই পর্যন্ত কলকাতা বা সারা বাংলায় লোকাল ট্রেন বা মেট্রো রেল চালানোর অনুমতি দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা রাজ্য সরকারের নেই। কিন্তু সেই সাংবাদিক সম্মেলনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সিদ্ধান্ত বদলে ফেলল সরকার। ১ জুলাই থেকেই মেট্রো রেলকে কলকাতায় ট্রেন চালানোর প্রস্তাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে মেট্রো চালাতে হলে তাদের রাজ্য সরকারের দেওয়া বেশ কিছু কড়া শর্ত মানতেই হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে রেল এবং মেট্রোর তরফে জানানো হয়েছিল, রাজ্যে তারা পরিষেবা চালু করতে প্রস্তুত। তবে রাজ্য সরকারের তরফে তাদের এ বিষয়ে প্রস্তাব দিতে হবে। রাজ্যের প্রস্তাব এলেই তারা রেল পরিষেবা শুরু করার কথা ভাববে। শুক্রবার মমতা জানান, কলকাতা মেট্রোর সঙ্গে সরকারের কথা হয়েছে। সরকারের তরফে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ট্রেনে যতগুলি সিট রয়েছে, ততজন যাত্রীর কাছেই টিকিট বিক্রি করতে হবে। সোশ্যালি স্যানিটাইজেশন করে সেই সিটগুলিতে যাত্রীদের বসতে দিতে হবে। মেট্রো রেলের তরফে অবশ্য রাজ্য সরকারের প্রস্তাব নিয়ে এদিন কোনও মতামত জানানো হয়নি। তবে সূত্রের খবর, রাজ্যের প্রস্তাব ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকেই মেট্রো কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করছে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিষ্কার জানিয়ে দেন, মেট্রোর কামরায় কোনও ভাবেই ভিড় করা যাবে না। কর্তৃপক্ষকেই এ বিষয়ে কড়া হতে হবে। কী ভাবে সিট অনুযায়ী যাত্রীদের ঢোকানো হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে তারাই। একই সঙ্গে তিনি এ কথাও বলেন, ‘মেট্রোর তো সেই সিস্টেম আছেই। ট্রেনে রয়েছে অটো শাট গেট। তা হলে সিট অনুযায়ী যাত্রীদের প্রবেশ করানোর ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। সিট অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী ওই গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকবেন। কিন্তু প্রত্যেককে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। হাতে এখনও কয়েকটা দিন রয়েছে। মেট্রো ভাবুক কী করে সেটা করা যায়!’ তবে লোকাল ট্রেন চালানোর জন্য এখনও রেলকে প্রস্তাব দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্যের আগের সিদ্ধান্তই বহাল রয়েছে। অর্থাৎ, জুলাই মাসেও লোকাল ট্রেন বা মেট্রো রেলের পরিষেবা চালু হবে না। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এই পরিস্থিতিতে জনস্বার্থে লোকাল ট্রেন বা মেট্রো রেল চালানোর অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।
এ ছাড়া এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, তিনি চান না বেসরকারি বাসগুলো ভাড়া বাড়াক। তাদের ক্ষতির কথা ভেবে বেসরকারি বাস পিছু মাসে ১৫ হাজার টাকা করে ভর্তুকি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি। উল্লেখ্য, দেড় মাস আগে তিনি জানিয়েছিলেন, বাস চলবে। তবে ভাড়া বাড়ানো হবে কিনা, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন বাস মালিকরাই। বাড়লে যাঁরা সেই ভাড়া দিতে পারবেন, তাঁরাই বাসে উঠবেন। যাঁরা পারবেন না, তাঁরা উঠবেন না। ইতিমধ্যে কলকাতায় অনেক বেসরকারি বাসই বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অবশ্য এখন মুখ্যমন্ত্রী সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেন।
করোনা পরিস্থিতির জেরে এ বছর ২১ জুলাই শহিদ দিবসের কোনও অনুষ্ঠান হবে না বলেও এ দিন জানিয়ে দেন মমতা। প্রসঙ্গত, প্রতি বছর এসপ্ল্যানেডে ওই দিন বিশাল সমাবেশ করে শাসক দল তৃণমূল। বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা অনেক কঠিন এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধি মানাও অসম্ভব। তাই ওই কর্মসূচি বাতিল করার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু নবান্ন থেকে দলীয় কর্মসূচি নিয়ে এ ভাবে কোনও ঘোষণা করা যায় কিনা, সেই প্রশ্ন ইতিমধ্যে উঠতে শুরু করেছে।